লোকড়া থেকে ডিবি’র গোয়েন্দা জালে আটক মূলহোতা, ১২টি সাইকেল জব্দ
তারিখ: ২৬-মে-২০২৩
জাকারিয়া চৌধুরী \

একটি মোটরসাইকেল চুরির মামলা তদন্ত করতে গিয়ে একটি চক্রের সন্ধান পেয়েছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ। যারা টার্গেট করার পর একটি মোটরসাইকেলের লক ভেঙে চুরি করে পালাতে সময় লাগে মাত্র ৩০ সেকেন্ড। পরে চোরাই মোটরসাইকেল দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে নিয়ে যাওয়া হয় হবিগঞ্জে। একটি মোটরসাইকেল চুরির মামলা তদন্ত করতে গিয়ে এই চক্রের সন্ধান পায় তারা। চোর চক্রের অন্যতম মো.জাকারিয়া হোসেন হৃদয় নামে একজনকে হবিগঞ্জ সদর উপজেলার লোকড়া বাজার থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তার কাছ থেকে বিভিন্ন মডেলের ১২টি মোটরসাইকেল উদ্ধার করা হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ।
এ সময় তিনি জানান, এই চক্রটি মাত্র ২৫-৩০ সেকেন্ডে শপিংমলের সামনে থেকে চুরি করে নিয়ে যায়। এই চুরি করতে তারা একটি মাস্টার চাবি ব্যবহার করে। এই চাবিটি ব্যবহার করে মাত্র ২৫-৩০ সেকেন্ডে মোটরসাইকেলের ঘাড় লক ভেঙ্গে মোটরসাইকেল চালু করে নিয়ে পালিয়ে যায়। জাকারিয়া ছাড়া চক্রে আরও বেশ কয়েকজন সদস্য রয়েছে, তাদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে। তিনি আরও বলেন, থানায় একটি চুরির মামলা হলে কাজ করতে হয়, অনেক কষ্ট করতে হয়। তাই এই ভয়ে অনেক থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা (ওসি) চুরির মামলা নিতে চান না। তবে আবার অনেকে (ওসি) কষ্টও করেছেন। আবার মোটরসাইকেল চুরি হলে অনেকে মামলা করতেও চান না। তাই আমি বলব মোটরসাইকেল চুরি হলে জিডি না করে মামলা করতে। থানা মামলা নিতে না চাইলে গোয়েন্দা কার্যালয়ে এলে আমরা অভিযোগ নেব। সংবাদ সম্মেলনে ডিএমপি গোয়েন্দা বিভাগের (ডিবি) অতিরিক্ত কমিশনার বলেন, চার চাকার গাড়ি কেনার সামর্থ্য যাদের নাই, মোটরসাইকেল তাদের জন্য শুধু একটি দ্বিচক্রযানই নয়, একটি প্রয়োজনীয়তা, বাস্তবতা ও একটি স্বপ্ন। মোটরসাইকেলটি চুরি হয়ে গেলে স্বপ্নটা শুধু ভেঙে যায় না, বাস্তবতা হয়ে পড়ে কঠিন। এই চোর চক্রকে গ্রেপ্তারে কাজ করে যাচ্ছে পুলিশ।
ডিএমপি ডিবির গুলশান বিভাগ ১২টি চোরাই মোটরসাইকেল উদ্ধার করে গত বুধবার দুই থেকে তিনটি মোটরসাইকেল চোর চক্রের ওই সদস্যকে আটক করে বিস্তারিত জানাতে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে।
সংবাদ সম্মেলনে মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ বলেন, গত ১০ মে যমুনা ফিউচার পার্কের সামনে থেকে একটি মোটরসাইকেল চুরি হয়। এ ঘটনায় ২৩ মে মালিকের অভিযোগের প্রেক্ষিতে ভাটারা থানায় একটি মামলা করা হয়। মামলাটির ছায়া তদন্ত করতে গিয়ে গোয়েন্দা-গুলশান বিভাগ তথ্য প্রযুক্তি ও গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে একটি সংঘবদ্ধ মোটরসাইকেল চোর চক্রের সন্ধান পায়। সেই সূত্র ধরে বুধবার হবিগঞ্জ সদর উপজেলার লোকরা বাজারের ‘বন্ধু মটরস’ গ্যারেজ থেকে ১২টি চোরাই মোটরসাইকেলসহ হৃদয় নামের একজনকে আটক করা হয়।
ডিএমপির এই প্রধান গোয়েন্দা কর্মকর্তা বলেন, এ চক্রটি কয়েকটি ধাপে মোটরসাইকেল চুরি ও বিক্রির কাজটি সম্পন্ন করে থাকে। এ চক্রের একজন সদস্য স্পটে থাকে। সে মোটরসাইকেল মালিকের গতিবিধি লক্ষ করে। অন্য সদস্যরা মোটরসাইকেলটি কিছু সময় পর্যবেক্ষণ করে মাত্র ২৫ থেকে ৩০ সেকেন্ডের মধ্যে সঙ্গে থাকা মাস্টার চাবি দিয়ে লক ভেঙে দ্রæত পালিয়ে যায়। পরবর্তী সময়ে চোরাই মোটরসাইকেলটি কয়েকটি হাত বদল হয়। এভাবে লাখাই রোডের বন্ধু মটরস গ্যারেজ পর্যন্ত পৌঁছায়। সেখানে কিছু যন্ত্রপাতি পরিবর্তন, চ্যাসিস ও ইঞ্জিন নম্বর পাঞ্চ করে আবার বিক্রি করে দেয়।
আটক হৃদয়ের বরাত দিয়ে মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ বলেন, এ চক্রটি দীর্ঘদিন ধরে ঢাকা, গাজীপুর, নরসিংদী, নাসিরনগর, হবিগঞ্জ, মৌলভীবাজারসহ দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে প্রতি সপ্তাহে দুই থেকে তিনটি করে মোটরসাইকেল চুরি করে ‘বন্ধু মটরস’ গ্যারেজে এনে বিক্রি করে। এরা একটি সংঘবদ্ধ চোর চক্রের সদস্য। মোটরসাইকেল নিয়ে স্কুল বা মার্কেটে গেলে যেখানে-সেখানে না রেখে নির্ধারিত জায়গায় পার্কিং করা এবং চুরি হলে সঙ্গে সঙ্গে থানায় মামলা করার আহŸান জানান গোয়েন্দা পুলিশের এই কর্মকর্তা।
তিনি আরও বলেন, ওই মোটরসাইকেলটি উদ্ধারের জন্য আমরা বন্ধু মটরসের গ্যারেজে অভিযান পরিচালনা করি। এসময় এই চোর চক্রের মূলহোতা জাকারিয়াকে গ্রেপ্তার করা হয়। ঢাকা শহরসহ গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জসহ আশপাশের এলাকায় যত মোটরসাইকেল চুরি হয় এর সঙ্গে এই চক্রটি জড়িত। গ্রেপ্তারদের মধ্যে সুমন এই চক্রের রেকি সদস্য। সে বিভিন্ন শপিংমলের সামনে গিয়ে মোটরসাইকেল রেকি করে। মালিক মোটরসাইকেল রেখে শপিংমলের ভিতরে যাওয়ার পর অন্য সদস্যদের সে জানায়। এই তথ্য পাওয়ার পর চক্রের সদস্য জিতু ও জাহাঙ্গীর তাদের কাছে থাকা মাস্টার চাবি দিয়ে মোটরসাইকেলটি চালু করে দ্রæত পালিয়ে যায়।