স্টাফ রিপোর্টার ॥
চুনারুঘাট উপজেলার গোলগাঁও গ্রামের বিধবা সুফিয়া বেগমের জীবনের তিন দশক কেটেছে জরাজীর্ণ এক ঝুপড়ি ঘরে। বর্ষায় টিন ফুটো হয়ে বৃষ্টি ঢুকত, দমকা হাওয়ায় কেঁপে উঠত পুরো ঘর। বারবার সরকারি সহায়তার জন্য আবেদন করেও কোনো ফল পাননি তিনি। মাত্র এক শতক জমির ওপরই কোনোভাবে বেঁচে ছিলেন ৬০ বছর বয়সী এই নারী। এই অসহায় বাস্তবতার কথা উঠে আসে স্থানীয় সাংবাদিক নুর উদ্দিন সুমনের ফেসবুকে দেওয়া একটি মানবিক পোস্টে। পোস্টটি নজরে আসে হবিগঞ্জের পুলিশ সুপার (এসপি) এ.এন.এম সাজেদুর রহমানের। বিষয়টি জানতে পেরেই তিনি ব্যক্তিগত অর্থায়নে সুফিয়ার জন্য একটি দুই কক্ষবিশিষ্ট পাকা ঘর নির্মাণের উদ্যোগ নেন।
গত এপ্রিল মাসে শুরু হওয়া নির্মাণকাজ তিন মাসের মধ্যে সম্পন্ন হয়। গতকাল শুক্রবার বিকেলে পুলিশ সুপার নিজে সুফিয়ার বাড়িতে গিয়ে নবনির্মিত ঘরটি পরিদর্শন করেন। এ সময় তিনি ফল ও মিষ্টি উপহার দেন। পরিদর্শনকালে এসপি সাজেদুর রহমান বলেন, একজন মানুষের মাথার ওপর নিরাপদ ছাদ তুলে দেওয়া মানে তাকে মর্যাদা ও নিরাপত্তার ভরসা দেওয়া। সুফিয়ার ঘরটি শুধু একটি নির্মাণ নয়, এটি সমাজের দুর্বল মানুষের প্রতি আমাদের দায়িত্ববোধের প্রতীক। নতুন ঘর পেয়ে আবেগে ভেঙে পড়েন সুফিয়া বেগম। কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি বলেন, জীবনে কোনোদিন ভাবিনি আমার এই ঝুপড়ির জায়গায় পাকা ঘর দাঁড়াবে। এসপি স্যারের জন্য দোয়া করি। আমার আর কোনো চাওয়া নেই।
স্বামীর মৃত্যুর পর একাই সংগ্রাম করেছেন সুফিয়া। কখনো উপবাস, কখনো ধারকর্জ করে দিন পার করেছেন। একমাত্র মেয়েটি ছাড়া এ দুনিয়ায় তাঁর আপনজন কেউ নেই। স্থানীয়রা জানান, বছরের পর বছর ভাঙাচোরা ঘরেই কাটছিল সুফিয়ার জীবন। ইউনিয়ন পরিষদ থেকে শুরু করে জনপ্রতিনিধিসহ বিভিন্ন জায়গায় আবেদন করেও কোনো সহায়তা পাননি তিনি। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিষয়টি ছড়িয়ে পড়ার পরই মূলত শুরু হয় পরিবর্তনের পথচলা। গোলাগাঁও গ্রামের বাসিন্দা মো. রাসেল মিয়া বলেন, এটা শুধু একটি ঘর নয়- এটি মানবিকতার একটি দৃষ্টান্ত। আমাদের গ্রামের ইতিহাসে এটি মনে রাখার মতো ঘটনা হয়ে থাকবে। স্থানীয় নারী রুজিনা আক্তার বলেন, সুফিয়ার কষ্ট আমরা নিজের চোখে দেখেছি। নিজের টাকায় এসপি স্যার ঘর করে দিয়েছেন- বিশ্বাসই করতে পারছিলাম না। আরেক বাসিন্দা আব্দুল হামিদ বলেন, সরকারি সহায়তা না পেয়ে তিনি একা লড়ছিলেন। এই উদ্যোগ সমাজের জন্য বড় উদাহরণ।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন বাহুবল থানার ওসি আমিনুল ইসলাম, চুনারুঘাট থানার ওসি জাহিদুল ইসলাম, চুনারুঘাট প্রেসক্লাবের সভাপতি অধ্যক্ষ ফারুক উদ্দিন চৌধুরী, সাংবাদিক নুর উদ্দিন সুমন, মাসুদ আলম, সাবেক ইউপি সদস্য কাজল মিয়া, মাওলানা মনছুর, রাসেলসহ স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ। পরিদর্শন শেষে গ্রামবাসীর পক্ষ থেকে পুলিশ সুপার এ.এন.এম সাজেদুর রহমানকে একটি সম্মাননা ক্রেস্ট দেওয়া হয়। প্রচারবিমুখ এই মানবিক উদ্যোগে পুলিশের প্রতি এলাকার মানুষের আস্থা আরও বেড়েছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা।