স্টাফ রিপোর্টার ॥
চুনারুঘাট উপজেলায় অবস্থিত ইসলামিক ফাউন্ডেশনের অধীন ইসলামিক মিশন নরপতি পরিদর্শন করেছেন ধর্ম উপদেষ্টা এএফএম খালেদ হোসেন। পরিদর্শনকালে মিশনের সার্বিক কার্যক্রম, সেবার মান ও ব্যবস্থাপনায় একাধিক অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনার চিত্র উঠে আসে। পরিদর্শনের সময় মিশনে কর্মরত চিকিৎসক ডা. শামছিয়া তাসনিম দ্বীপি ধর্ম উপদেষ্টার কাছে অভিযোগ করেন, মিশনের আশপাশ এলাকার লোকজন অত্যন্ত খারাপ প্রকৃতির এবং চুরির সঙ্গে জড়িত।
তিনি দাবি করেন, মিশনের ভেতরে থাকা নারিকেল পুকুরের মাছ চুরি হয়ে যাচ্ছে এবং পার্শ্ববর্তী বাড়িগুলো থেকে নিয়মিত ময়লা–আবর্জনা ফেলে পরিবেশ দূষণ করা হচ্ছে। তবে চিকিৎসকের এসব বক্তব্যকে ভুল, অতিরঞ্জিত ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত দাবি করে মিশনের আশপাশ এলাকার বাসিন্দারা ধর্ম উপদেষ্টার কাছে মৌখিকভাবে নালিশ জানান। তারা বলেন, পুরো এলাকার মানুষকে ঢালাওভাবে “খারাপ” ও “চোর” হিসেবে উপস্থাপন করা মানহানিকর ও অনৈতিক। এ ধরনের বক্তব্যে তাৎক্ষণিক লোকজন তীব্র প্রতিবাদ জানান এবং ডাক্তারের বিতর্কিত বক্তব্যে তৈরি হয়েছে উত্তেজনা।
ধর্ম উপদেষ্টা পরিদর্শনকালে মিশনের ভেতরে বেশ কিছু অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনা প্রত্যক্ষ করেন। এর মধ্যে নিম্নমানের ওষুধ সরবরাহ সেলাই মেশিনের স্ট্যান্ড থাকলেও মেশিনের অনুপস্থিতি, মিশনের অভ্যন্তরীণ পরিবেশের নাজুক ও অস্বাস্থ্যকর অবস্থা সেবাপ্রার্থীদের সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণের অভিযোগ। এ সব বিষয় নজরে আসার পর ধর্ম উপদেষ্টা তাৎক্ষণিকভাবে চুনারুঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ জিয়াউর রহমানকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে নির্দেশনা দেন। পরিদর্শন চলাকালে উপজেলা প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে প্রত্যাশিত সহযোগিতা পাওয়া যায়নি বলেও অভিযোগ তুলেন ওই ডাক্তার।
তবে এ বিষয়ে চুনারুঘাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, চুরির বিষয়ে এখন পর্যন্ত আমার কাছে কোনো লিখিত বা মৌখিক অভিযোগ দেওয়া হয়নি। এ বিষয়ে ডা. শামছিয়া তাসনিম দ্বীপি বলেন, আমার কোনো বরাদ্দ নেই। চুরির সঙ্গে কারা জড়িত, তার তালিকা আছে, তবে এখন বলবো না। ঢালাওভাবে এলাকার মানুষকে চোর ও খারাপ বলার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, মেজাজ খারাপ ছিল। আপনার অনিয়মের বিষয় ইউএনওকে ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে জানেন কি জানতে চাইলে- সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি আরও বলেন, “আমি আগারগাঁও হেড অফিসে চাকরি করেছি, ইউএনও আমার কী করবে? তার এমন আচরণে মিশনে চিকিৎসা নিতে আসা একাধিক সেবাগ্রহীতাও অভিযোগ করেন, চিকিৎসকের আচরণ অসৌজন্যমূলক ও রূঢ়। এতে সেবা নিতে এসে তারা বিব্রত ও ক্ষুব্ধ হন।
ঘটনাস্থলে উপস্থিত উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ জিয়াউর রহমান পুরো পরিস্থিতিতে বিব্রত বোধ করেন এবং বিষয়টি গুরুত্বসহকারে দেখে প্রয়োজনে প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে আশ্বস্ত করেন। পরিদর্শনকালে উপস্থিত ছিলেন সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান সৈয়দ লিয়াকত হাসান, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ জিয়াউর রহমান, চুনারুঘাট থানার ওসি মো. শফিকুল ইসলামসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
পরিদর্শন শেষে ধর্ম উপদেষ্টা চুনারুঘাটের ঐতিহ্যবাহী মুড়ারবন মাজার পরিদর্শন করেন। এ বিষয়ে স্থানীয় ইউপি সদস্য ইমান আলী বলেন, ইসলামিক মিশনে কর্মরত ডাক্তারের আচরণ অত্যন্ত ভয়াবহ ও অনাকাঙ্খিত। তিনি জানান, অনেক সেবাগ্রহীতা চিকিৎসা নিতে গিয়ে ডাক্তারের অসৌজন্যমূলক ও অশোভন আচরণের বিষয়ে তার কাছে অভিযোগ করেছেন। বিষয়টি নিয়ে তিনি গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানান।