চুনারুঘাট উপজেলার রশিদপুর বন বিটের আওতাধীন হাতিমারা চা বাগানের গির্জাঘর এলাকায় টিলা পরিষ্কার করতে গাছ কাটা ও আগুন দেওয়ার বিষয়টি গণমাধ্যমে প্রকাশের পর এখন নতুন করে আর কোন টিলা পরিস্কার করা হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা। এরই মধ্যে যে জায়গাটি পরিস্কার করা হয়েছে সেখানে টিলা কেটে লাগানো হচ্ছে চা গাছের চারা।
স্থানীয়রা জানান, হাতিমারা চা বাগান কর্তৃপক্ষ প্রতি বছরই বাগান সম্প্রসারণ করে। চলতি বছর তারা গির্জাঘর এলাকায় বাগান সৃজনের লক্ষ্যে টিলা পরিস্কার শুরু করে।
জানা গেছে, গত এক সপ্তাহ ধরে গির্জাঘর এলাকার তিনটি টিলা থেকে অন্তত দেড় শতাধিক গাছ কেটে ফেলেছে বাগান কর্তৃপক্ষ। যে গাছগুলোর বয়স ৫০ থেকে ১০০ বছরেরও বেশি।
টিলা পরিস্কার করতে আগুন ধরিয়ে দেওয়ায় সেখানে বসবাসরত বিভিন্ন প্রজাতির বন্যপ্রাণী পুড়ে মারা গেছে, আহত হয়েছে অসংখ্য প্রাণী। স্থায়ী বাসস্থান হারিয়ে এদিক-ওদিক ছুটে বেড়াচ্ছে বন্যপ্রাণীরা, লোকালয়ে এসে পড়ছে শিকারির হাতে।
কিন্তু গণমাধ্যমে এ খবর প্রকাশের পর কাজ বন্ধ রাখা হয়েছে বলে জানান স্থানীয়রা।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে হাতিমারা চা বাগানের এক কর্মী জানান, চলতি বছর তিন একর জায়গায় নতুন বাগান করার পরিকল্পনা করে কর্তৃপক্ষ। তিনটি টিলাজুড়ে এক একর জায়গার মতো পরিস্কার করার পর বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। এরপর থেকে টিলা পরিস্কার করার কাজ বন্ধ রাখা হয়েছে।
স্থানীয় বাসিন্দা মো. নানু মিয়া জানান, ‘টিলায় গাছ কাটা ও আগুন দেওয়ার বিষয়টি জানাজানি হলে নতুন করে আর কোন টিলায় আগুন দেয়নি বাগান কর্তৃপক্ষ। তবে যে তিনটি টিলা এরই মধ্যে পরিস্কার করা হয়েছে সেগুলো কেটে নতুন বাগান তৈরী করা হচ্ছে।’
এ বিষয়ে বন বিভাগের তদন্ত কমিটির বিরুদ্ধে স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগ তুলেছেন পরিবেশকর্মী ও স্থানীয় লোকজন।
প্রকৃতি ও পরিবেশ বিষয়ক সংগঠন মিতা ফাউন্ডেশনের সমন্বয়কারী রবি কস্তা বলেন, ‘গতকাল সোমবার বন বিভাগ বিষয়টি নিয়ে তদন্ত করেছে। কিন্তু যারা তদন্ত করেছে তারা আমাদের কোনো স্বাক্ষাৎকারই নেয়নি। তদন্ত কমিটি যাদের বক্তব্য নিয়েছে তারা সকলেই হাতিমারা বাগানের শ্রমিক।’
শ্রমিকরা কর্তৃপক্ষকে সত্য কথা বলেনি উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘বাগান ম্যানেজার যা শিখিয়ে দেবে, তারা সেভাবেই বলবে।’
রবি কস্তা আরো বলেন, ‘আমরা বিষয়টি নিয়ে কথা বলায় এবং সাংবাদিকদের অবগত করার কারণে বাগান কর্তৃপক্ষ আমাকে বিভিন্নভাবে হুমকি-ধামকি দিচ্ছে। এমনকি অন্য যারা গণমাধ্যমে কথা বলেছে তাদেরকেও হুমকি দেওয়া হচ্ছে।’
এ ব্যাপারে তদন্তকারী দলের প্রধান রেমা বন বিটের রেঞ্জ কর্মকর্তা মো. খলিলুর রহমান বলেন, ‘আমরা গতকাল ঘটনাস্থলে গিয়ে তদন্ত করেছি, স্থানীয় শ্রমিকদের সাথে কথা বলেছি। বাগান কর্তৃপক্ষ যে টিলাগুলো পরিস্কার করছে সেগুলো তাদের নিজস্ব জায়গা।’
‘এছাড়া যে গাছগুলো কাটা হয়েছে সেগুলোও আম, জাম, কাটালসহ বিভিন্ন ফল গাছ। সুতরাং তারা তাদের কাছ কাটতেই পারে, আমাদের কিছু বলার নেই’।
বন্যপ্রাণী পুড়ে মরার কোন প্রমাণ পাওয়া যায়নি উল্লেখ করে খলিলুর রহমান বলেন, ‘স্থানীয়রা হয়তো পুরনো ছবি গণমাধ্যম কর্মীদের দিয়েছেন।’
তবে টিলায় আগুন দেওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘টিলাতে তারা আগুন দিতে পারে কি-না সে বিষয়ে আইনটি আমার জানা নেই।’
এ ব্যাপারে হাতিমারা চা বাগানের ব্যবস্থাপক মঈন উদ্দিন বলেন, ‘আমরা টিলার ভুমি পরিস্কার করে নতুন চা গাছ লাগাচ্ছি। এখানে কোন বন্যাপ্রাণী থাকে না।’
‘বন বিভাগের তদন্ত কমিটি বিষয়টি নিয়ে তদন্ত করছে, তারাই সত্য ঘটনা বলতে পারবে। এর বাইরে আমার কিছু বলার নেই’, যোগ করেন তিনি।