সংকটে জর্জরিত শহরে শতবর্ষী চন্দ্রনাথ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ॥ সুনামের খোরাক দুর্দশায় বন্দি
তারিখ: ১৮-নভেম্বর-২০২৫
আখলাছ আহমেদ প্রিয় ॥

হবিগঞ্জ শহরের শতবর্ষী ঐতিহ্যবাহী চন্দ্রনাথ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি কালক্রমে দুর্দশায় পরিণত হয়েছে। ১৯০৮ সালে প্রতিষ্ঠিত বিদ্যালয়টি একসময় শহরের জনপ্রিয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ছিল। কিন্তু এত বছর পার করলেও এর অবকাঠামোগত তেমন কোনো উন্নয়ন হয়নি। জরাজীর্ণ ভবন আর পর্যাপ্ত শ্রেণিকক্ষের অভাবে ব্যাঘাত ঘটছে পাঠ্য কার্যক্রমে। অনেক সময় শ্রেনী কক্ষের অভাবে অফিস কক্ষে চলে পাঠদান। এছাড়া বিদ্যালয়ে নেই শিশুদের খেলার মাঠ, এমনকি টয়লেটও। জরুরি প্রয়োজনে পাশের বাড়ির শৌচাগার ব্যবহার করেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। ফলে শিক্ষক-শিক্ষার্র্থীরা প্রতিনিয়ত দূর্ভোগের শিকার হচ্ছেন।  
সরেজমিনে দেখা যায়, সংক্ষিপ্ত পরিসরে বিদ্যালয়ে চলে পাঠদান। একই কক্ষে দুই শ্রেণির পড়াশুনার কার্যক্রম চালাচ্ছেন শিক্ষকরা। ছাত্র-ছাত্রী আর দুই শিক্ষকের পড়ানোর শব্দ নিয়ন্ত্রণে মাঝে ব্যবহার করা হয়েছে অস্থায়ী পার্টিশন। পর্যাপ্ত শ্রেণী কক্ষ না থাকায় এটি এখন প্রায় ব্যবহার অনুপযোগী। অফিস কক্ষেও চলে পাঠদান। এতে বিঘ্নিত হচ্ছে শিক্ষার্থীদের পড়ালেখা। এছাড়া শিক্ষার্থীদের জন্য নেই কোনো খেলার মাঠ এবং পর্যাপ্ত বিনোদনের উপকরন। যে গুলো রয়েছে সেগুলো ব্যবহাওে অনুপযোগি ও ধ্বংসের পথে। 
অভিযোগ রয়েছে, বিদ্যালয়ে ১৭ শতক জায়গার একটি বড় অংশ হবিগঞ্জ পৌরসভার নিয়ন্ত্রণে। সেখানে পুকুর খনন করা হয়েছে। যার ফলে নতুন ভবণ নির্মানে উদ্যোগ নিচ্ছেনা কর্তৃপক্ষ। এ বিষয়ে কাগজপত্র না দেখে জায়গার বিষয়ে কিছু বলা সম্ভব নয় বলে জানান হবিগঞ্জ পৌর নির্বাহী কর্মকর্তা জাবেদ ইকবাল চৌধুরী। যদিও স্কুলের চলমান উন্নয়ন কাজ নিয়েও আদালতের নিষেধাজ্ঞা রয়েছে বলে দাবী করেন তিনি। তবে, শিক্ষার্থীদের শিক্ষার পরিবেশ উন্নয়নে সহযোগিতার আশ্বাস দেন এই কর্মকর্তা। 
স্থানীয়রা জানান, বিদ্যালয়টি এক সময়ের শহরে সুনামের খোরাক ছিল। শত বছরের ঐতিহ্যবাহী বিদ্যালয়টি ছিল সবার মুখে মুখে। সময়ের কালক্রমে বিদ্যালয়টি চোখের সামনে ধ্বংস পথে পরিণত হয়েছে।  দ্রুত জায়গার সংকট কাটাতে উদ্যোগ নেবে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ, এমনটাই দাবী করছেন তারা। 
শিক্ষকরা জানান, বিদ্যালয়ে শিক্ষার মান খুবই ভাল। প্রতি বছর বিদ্যালয় থেকে শিক্ষার্থীরা বৃত্তি লাভ করে। বিদ্যালয়ের শিক্ষার মানোন্নয়ে নিয়মিত পাঠ্যদান কার্যক্রম চালানো হয়। শিক্ষার্থীদের পড়াশুনায় মনোযোগি ও আগ্রহী করে তুলতে খেলার মাঠ ও বিনোদনের ব্যবস্থা করা খুবই প্রয়োজন। 
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক কাজল মিয়া জানান, শ্রেণী কক্ষের সংকট থাকায় ক্লাস নিতে হয় অফিস কক্ষে। যে কারনে প্রতিনিয়ত পাঠ্য কার্যক্রমে ব্যাঘাত ঘটছে। শহরের অন্যান্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের তুলনায় সংকটে জর্জরিত হয়ে পড়েছে বিদ্যালয়টি। মাঠ না থাকায় শিক্ষার্থীদের খেলাধুলার কোন সুুযোগ নেই। বিদ্যালয়ের ১৭ শতক জায়গার একটি বড় অংশ হবিগঞ্জ পৌরসভার নিয়ন্ত্রণে চলে গেছে। সেখানে পুকুর খননও করা হয়েছে। ফলে নতুন ভবন নির্মাণ সম্ভব হচ্ছে না। কাগজপত্র বুুঝে পেলে আধুনিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বিদ্যালয়টি উন্নীত হবে বলে জানান তিনি। 
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোঃ শাহ আলম বলেন, ‘বিদ্যালয়ের বিষয়ে জেলা প্রশাসকের সঙ্গে কথা হয়েছে। ইতিমধ্যে জেলা প্রশাসক দুই বার বিদ্যালয়টি পরিদর্শন করেছেন। বিদ্যালয়ের জায়গা পুনরুদ্ধারে পৌরসভার সঙ্গে আলোচনা চলছে’। 

প্রথম পাতা