শহরে রোগাক্রান্ত গরুর মাংস বিক্রি ॥ জনস্বাস্থ্যে ভয়াবহ ঝুঁকি
তারিখ: ২৫-নভেম্বর-২০২৫
স্টাফ রিপোর্টার ॥

হবিগঞ্জ শহরের বিভিন্ন বাজারে রোগাক্রান্ত গরুর মাংস বিক্রির অভিযোগ ক্রমেই ঘনীভূত হচ্ছে। দেশের একটি ঘনবসতিপূর্ণ জেলা শহরে খাদ্যনিরাপত্তা নিশ্চিত করা যেখানে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, সেখানে প্রকাশ্যে রোগাক্রান্ত পশুর মাংস বিক্রি শুধু ভোক্তার স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়াচ্ছে না, এটা বাজার ব্যবস্থাপনার গভীর সংকটকেও সামনে নিয়ে আসছে।
শহরের শায়েস্তানগর বাজার, চৌধুরী বাজার ও চাষিবাজারে কয়েকদিন ধরে ঘুরে দেখা যায়, সকাল থেকে রাত পর্যন্ত বিভিন্ন দোকানে সন্দেহজনক গরুর মাংস গ্রাহকদের কাছে বিক্রি হচ্ছে। ক্রেতাদের দাবি, কিছু ব্যবসায়ী অসুস্থ বা অস্বাভাবিকভাবে মৃত গরুর মাংস সস্তায় সংগ্রহ করে বাজারে চড়া দামে চালান দিয়ে দেন।
চাষিবাজারে এক ক্রেতা বলেন, ‘মাংসের রং অস্বাভাবিক দেখলে আমরা বিক্রেতাকে বলতে পারি না। বললে ঝামেলা হয়। কিন্তু সঠিক নজরদারি না থাকায় অনেকেই জানেন না কী কিনছেন’। রোগাক্রান্ত পশুর মাংস মানবদেহে বিভিন্ন জীবাণু, সংক্রমণ বা পরজীবী ছড়িয়ে দিতে পারে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সেসব মাংস খেলে জ্বর, ডায়রিয়া, খাদ্যে বিষক্রিয়া থেকে শুরু করে দীর্ঘমেয়াদি স্বাস্থ্যঝুঁকিও তৈরি হতে পারে। বিশেষ করে শিশু, বয়স্ক ও রোগ প্রতিরোধক্ষমতা কম এমন মানুষের জন্য এটি আরও বিপজ্জনক। স্থানীয় এক চিকিৎসক জানান, “বাজারের অস্বাস্থ্যকর এবং রোগাক্রান্ত মাংস দ্রুত পেটে সমস্যা, সংক্রমণ এবং লিভার জটিলতা তৈরি করতে পারে। সঠিক ভেটেরিনারি পরীক্ষার বাইরে কোনো মাংস বিক্রি হওয়া উচিত নয়।”
শহরের সাধারণ মানুষ মনে করছেন, তদারকির অভাবই অনিয়মকে বাড়তে দিয়েছে। অভিযোগ রয়েছে, হবিগঞ্জ পৌরসভার দায়িত্বপ্রাপ্ত স্যানেটারি ইন্সপেক্টর অবণী রায় নিয়মিত বাজার তদারকি করেন না। বাজারের মাংস পরীক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি, ল্যাব বা পর্যাপ্ত জনবলও নেই।
তবে বাজারের দোকানিরা অবশ্য অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, “আমরা বৈধভাবে জবাই করা গরুর মাংসই বিক্রি করি। এ ধরনের অভিযোগ অতিরঞ্জিত।” কিন্তু বাস্তবতা হলো, কোনো ধরনের ভেটেরিনারি সার্টিফিকেট বা জবাই-পরবর্তী স্বাস্থ্যপরীক্ষার নথি কোথাও দেখা যায় না।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, শহরের বিভিন্ন এলাকায় গরু সংগ্রহ, জবাই ও মাংস বাজারজাত করার পুরো প্রক্রিয়াই নিয়ন্ত্রণহীন। রোগাক্রান্ত বা মৃত গরু সস্তায় কেনা ব্যবসায়ীদের কাছে লাভজনক হওয়ায় এ ধরনের অনিয়ম থামছে না। আবার সামাজিক প্রতিক্রিয়া বা অভিযোগ গ্রহণের কোনো কাঠামো কার্যকর না থাকায় সাধারণ মানুষ অসহায়। বিভিন্ন এলাকা থেকে ভোরে ল্যাংড়া ও রোগাক্রান্ত গরু জবাই করে এনে বাজারে বিক্রি করা হয়।
হবিগঞ্জের ক্রেতারা বারবার একটাই প্রশ্ন তুলছেন, “জনস্বাস্থ্যের এমন ঝুঁকি দেখেও কর্তৃপক্ষ নীরব কেন?” সঠিক মনিটরিং এবং কঠোর আইন প্রয়োগ না হলে এই অনিয়ম আরও বৃদ্ধি পাবে, আর ভোক্তার জীবন থাকবে অনিশ্চয়তার মুখে।