স্টাফ রিপোর্টার ॥ “
রাজনৈতিক পরিচয় বা জনপ্রতিনিধির পদ ছাড়াই জনস্বার্থে নিরলসভাবে কাজ করে একটি উল্লেখযোগ্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন নবীগঞ্জ উপজেলার সদর ইউনিয়নের দত্তগ্রামের কৃতি সন্তান সমাজকর্মী আশরাফ উদ্দিন। সামাজিক ও পারিবারিকভাবে উচ্চ গ্রহণযোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও তিনি কখনোই কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত হননি। জনপ্রতিনিধি হিসেবে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার সুযোগ বহুবার এলেও সেসব প্রস্তাব তিনি বিনয়ের সঙ্গে ফিরিয়ে দেন।
আশরাফ উদ্দিনের মতে, “মানুষের উন্নয়ন করতে হলে রাজনীতি করতেই হবে এমন কোনো বাধ্যবাধকতা নেই। আন্তরিকতা থাকলে দলীয় পরিচয় ছাড়াই সমাজের জন্য অনেক ভালো কাজ করা যায়।”
বর্তমান রাজনীতিতে প্রতিশ্রুতি ও কর্মহীনতার অসামঞ্জস্যতার বিস্তৃতি দেখে তিনি আক্ষেপ প্রকাশ করেন। অভিযোগ রয়েছে, নির্বাচনের আগে প্রতিশ্রুতিতে ভরপুর হলেও নির্বাচিত হওয়ার পর অনেক জনপ্রতিনিধি উন্নয়নের পরিবর্তে ব্যক্তিস্বার্থে বেশি ব্যস্ত হন। উন্নয়ন প্রকল্পের অর্থ বরাদ্দের বড় অংশ অনেক সময় দলীয় লোকজন ও কিছু দুর্নীতিগ্রস্ত কর্মকর্তা-কর্মচারীর হাতে অপচয় হয় এতে ক্ষতিগ্রস্ত হয় রাষ্ট্রই।
এই প্রচলিত ধারার ঠিক বিপরীত চিত্র আশরাফ উদ্দিন। রাজনীতি না করেও তিনি বছরের পর বছর স্থানীয় উন্নয়নমূলক কাজের অগ্রভাগে থেকেছেন। রাস্তাঘাট, ব্রিজ-কালভার্ট নির্মাণ থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষের নানান সমস্যা তিনি নিজ উদ্যোগে নীতিনির্ধারকদের কাছে তুলে ধরেছেন। প্রয়োজনে সংশ্লিষ্ট বিভাগীয় কর্মকর্তাদের এলাকা পরিদর্শনে রাজি করিয়েছেন এবং তাদের সহায়তায় বাস্তবসম্মত উন্নয়ন পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করেছেন।
গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো তার কাজের পেছনে কোনো ব্যক্তিস্বার্থ বা অনিয়মের অভিযোগ নেই। নিজের অর্থ ব্যয় করে তিনি বহু উন্নয়নমূলক উদ্যোগ বাস্তবায়ন করেছেন। তবু কিছু জনপ্রতিনিধি তার সাফল্যে ঈর্ষান্বিত হয়ে তাকে নিয়ে মিথ্যাচার চালানোর চেষ্টা করেন। কিন্তু এসব নিয়ে তিনি উদাসীন। তার মন্তব্য “যাদের নিজে কিছু করার ক্ষমতা নেই, তারাই সমালোচনা করে। তারা সহযোগিতা করলে কাজ আরও এগোত।”
তিনি মনে করেন, সমাজে কিছু মানুষ আছে যারা অন্যের ভালো কাজে অনুপ্রাণিত হওয়ার বদলে উল্টো ক্ষতি করতে আনন্দ পায় এদেরই তিনি সমাজের ‘বড় শত্রু’ মনে করেন। রাজনৈতিক অস্থিরতাপূর্ণ সময়েও এলাকার উন্নয়ন নিয়ে তার আগ্রহ ও সক্রিয়তা থেমে যায়নি। নবীগঞ্জের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে নিজ গ্রাম দত্তগ্রাম পর্যন্ত প্রথম পাকা রাস্তা নির্মাণ তার গুরুত্বপূর্ণ অবদান হিসেবে স্থানীয়রা গর্বের সঙ্গে উল্লেখ করেন।
বর্তমানে কাজিরগাঁও থেকে মার্কুলী পর্যন্ত প্রায় ২৪ কিলোমিটার রাস্তা নির্মাণে ৩০ কোটি টাকার বিশাল প্রকল্প হাতে নিয়ে কাজ করছেন তিনি। পাশাপাশি জরুরি মেরামতের জন্য ৩ কোটি টাকার বরাদ্দ নিশ্চিত করা নিয়ে উদ্যোগ চলমান।
রাজনৈতিক দুর্যোগের সময় যখন অনেক প্রভাবশালী সাবেক নেতারা দুর্নীতির দায়ে গা-ঢাকা দিয়ে আছেন, তখন সাধারণ মানুষ আশরাফ উদ্দিনের মতো নিরপেক্ষ, সৎ, লোভহীন ও আদর্শবান ব্যক্তিকেই প্রকৃত নেতৃত্ব হিসেবে দেখতে চান যে নেতৃত্ব উন্নয়নকে দায়িত্ব মনে করে, স্বার্থ নয়। সবশেষে বলা যায় আশরাফ উদ্দিন শুধু একজন সমাজসেবী নন, তিনি সততা, দায়িত্ববোধ ও মানবিকতার এক উজ্জ্বল উদাহরণ।