গণশুণানিতে দুদক চেয়ারম্যান ড. মোমেন,শেখ হাসিনা নিজের সম্পত্তির গোঁজামিল দিয়ে নির্বাচন করেছেন
তারিখ: ২৫-নভেম্বর-২০২৫
জাকারিয়া চৌধুরী ॥

ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজেই তার সম্পত্তির একটা বিরাট রকম গোঁজামিল দিয়ে ২০০৮ সালে নির্বাচন করেছেন বলে মন্তব্য দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ আব্দুল মোমেনের। তিনি বলেছেন, ‘সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজেই তার সম্পত্তির একটা বিরাট রকম গোঁজামিল দিয়ে ২০০৮ সালে নির্বাচন করেছেন। সেটাই যদি না হতো, তাহলে তিনি নির্বাচিত হতেন না; তার মনোনয়ন বাতিল হয়। মনোনয়ন বাতিল হলে তিনি এমপি হন না, প্রধানমন্ত্রীও হতে পারতেন না। তার দলও ক্ষমতায় আসতে পারতো না। তা হলে দেখেন আমরা সেই সময় তার সম্পত্তির সঠিক হিসাব নিতে পারিনি।’ গতকাল সোমবার হবিগঞ্জ শিল্পকলা একাডেমিতে দুদকের জেলা সমন্বিত কার্যালয় আয়োজিত এক গণশুনানিতে প্রধান অতিথি ছিলেন ড. মোমেন। গণশুণানি শেষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে এসব কথা বলেন দুদক চেয়ারম্যান। গণশুনানিতে বিশেষ অতিথি ছিলেন দুদকের কমিশনার (তদন্ত) মিঞা মুহাম্মদ আলি আকবার আজিজী, সচিব মোহাম্মদ খালেদ রহীম, হবিগঞ্জের এসপি সাজেদুর রহমান। অনুষ্ঠানের সভাপতিত্ব করেন হবিগঞ্জের ডিসি আবু হাসনাত মোহাম্মদ আরেফীন। গণশুনানিতে হবিগঞ্জ জেলার প্রায় প্রতিটি সরকারি বেসরকারি দপ্তরের প্রধানসহ অভিযুক্ত ও অভিযোগকারী ব্যক্তিরা উপস্থিত ছিলেন। 
গণশুনানিতে মঞ্চ করা হয় ৩টি। দর্শকের মুখোমুখি মঞ্চে ছিলেন দুদক চেয়ারম্যানসহ অতিথিবৃন্দ। দুই পাশের একদিকে ছিলেন অভিযোগকারীরা, অপরদিকে অভিযুক্তরা। মাইকে অভিযোগ শুনে উত্তর দেন অভিযুক্ত ব্যক্তি বা কর্মকর্তা। আর সেগুলো শুনে মাইকেই সিদ্ধান্ত জানান দুদক চেয়ারম্যান। দর্শকসারির সবার সামনেই প্রকাশ্যে চলে গণশুনানি। শুনানিতে হবিগঞ্জ সদর উপজেলার হাতিরথান এলাকার ট্রাকচালক নোমান মিয়া সহকারী মোটরযান পরিদর্শকের উপস্থিতিতে তার বিরুদ্ধে ৪ হাজার টাকা ঘুষ দাবি করার অভিযোগ তোলেন। এর প্রেক্ষিতে দুদক চেয়ারম্যান অভিযোগের সত্যতা পেলে সহকারী মোটরযান পরিদর্শক আশরাফুল ইসলামকে দ্রুততম সময়ে সাময়িক বরখাস্ত করে তাঁর বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নিতে মাইকে ঘোষণা দেন। লাখাই উপজেলায় দীর্ঘ ১৯ বছর কর্মরত থাকা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা অমিত ভট্টাচার্যের বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগ থাকায় তাকে হবিগঞ্জ জেলার বাইরে বদলি করার জন্য সংশ্লিষ্টদের অনুরোধ জানান দুদক চেয়ারম্যান। এছাড়া নবীগঞ্জের গজনাইপুর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান ইমদাদুর রহমান মুকুলের বিরুদ্ধে সরকারি চাল আত্মসাত, বানিয়াচং উপজেলার আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক নানু মিয়া ও হবিগঞ্জের সাবেক খাদ্য নিয়ন্ত্রক গৌরপদ দে এর বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ উত্থাপিত হওয়ায় তাদের বিরুদ্ধে তদন্তের সিদ্ধান্ত নেয় দুদক। 
গণশুনানিতে ড. মোমেন বলেন, ‘নির্বাচনে আমরা যাদের নির্বাচিত করবো, তাদের দেখে শুনে করবো। খারাপ লোক নির্বাচিত করলে খারাপই প্রত্যাশা আমাদের। তাই আমরা ভাল লোক নির্বাচিত করবো। তাহলে ভালো প্রশাসক আসবে। না হলে খারাপ লোক খারাপ ঘুষখোর নিয়ে আসবে।’
এই গণশুনানি উপলক্ষে গত দুই সপ্তাহে জেলায় দুদকের দশটি বুথ স্থাপন করা হয়। সেখানে প্রায় দুইশ অভিযোগ জমা পড়ে। এসবের বেশিরভাগই রেলওয়ে, হাসপাতাল, নির্বাচন, রেজিস্ট্রি, বিআরটিএ, পাসপোর্ট, শিক্ষা অফিস, গণপূর্ত অফিসসহ বিভিন্ন সরকারি দপ্তরকে ঘিরে। এর মধ্যে একই তফসিলভুক্ত অভিযোগ বাতিল করে ৮১টি অভিযোগের প্রকাশ্য শুনানি অনুষ্ঠিত হয়েছে। এগুলোর মধ্যে ৩টি অভিযোগ অনুসন্ধানে নেয়া হয়। ৬০টি অভিযোগ নিষ্পত্তি করা হয় এবং বাকি অভিযোগগুলো প্রতিবেদন দাখিল সাপেক্ষে নিষ্পত্তি করা হবে বলে জানিয়েছে দুদক।