জেলায় ৫ম শ্রেনীর ফল প্রকাশের আগেই ৬ষ্ঠ শ্রেনীতে ভর্তি!
তারিখ: ২১-ডিসেম্বর-২০২৫
স্টাফ রিপোর্টার ॥

 জেলায় ৬ষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তি কার্যক্রম শুরু হয়েছে। অথচ প্রাথমিক সমাপনী (৫ম শ্রেণী) পরীক্ষার ফল এখনো প্রকাশ হয়নি। জেলার অনেক এলাকায় ভর্তি ফরম বিতরণ শেষ, শিক্ষার্থী মনোনয়ন ও এবং ভর্তি শুরু হয়েছে। ফলে এমন নীতিতে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছেন। সংশ্লিষ্টদের ভাষ্য অনুযায়ী,  ২০২১ সালে কেন্দ্রীয়ভাবে একটি নির্দেশনা জারি করে ফল প্রকাশের আগেই ৬ষ্ঠ শ্রেণির ভর্তি প্রক্রিয়ার সময়সূচি নির্ধারণ করা হয়। তখন সেটিকে ‘অস্থায়ী সিদ্ধান্ত’ বলা হলেও পরবর্তীতে সেটিই স্থায়ী রূপ নেয়। অভিযোগ রয়েছে, সেই নির্দেশনার কোনো সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা বা সংশোধন আজ পর্যন্ত হয়নি। চুনারুঘাট উপজেলার একাধিক প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অভিভাবক জানান, এখনো তাদের সন্তানের ৫ম শ্রেণির ফল প্রকাশ হয়নি। অথচ হবিগঞ্জ সরকারী উচ্চ বিদ্যালয়, চুনারুঘাট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, রাজারবাজার সরকারী উচ্চ বিদ্যালয়সহ  জেলা ও উপজেলার সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলো বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে বোর্ডে জানাচ্ছে এবং সংশ্লিষ্ট স্কুলের নামে ফেসবুক পোস্টে প্রকাশ করছে যে শিক্ষার্থী ‘ভর্তির জন্য নির্বাচিত’ হয়েছে। 
অভিভাবক লাইজু বেগম বলেন, ‘তার মেয়ের পঞ্চম শ্রেণির ফলাফল আগামী ৩০ ডিসেম্বর প্রকাশ হওয়ার কথা থাকলেও এখনো ফল জানা যায়নি। তিনি অভিযোগ করে বলেন, এডভান্স স্কুলে ভর্তি ফরম সংগ্রহ করতে গিয়ে জানতে পারেন, ফরম বিতরণ শুরু হয়েছিল ১২ ডিসেম্বর এবং তা এক সপ্তাহ আগেই শেষ হয়েছে। এছাড়া ২১ ডিসেম্বর ভর্তির শেষ সময় নির্ধারণ করা হয়েছে বলে জানানো হয়। এ অবস্থায় তিনি প্রশ্ন তোলেন, ফল প্রকাশের আগেই যদি ভর্তি নির্বাচন সম্পন্ন হয়, তাহলে শিক্ষার্থীদের মেধার মূল্য কোথায় থাকে? একই অভিযোগ করেন অভিভাবক জাহাঙ্গীর আলম। তাঁর ভাষ্য, পঞ্চম শ্রেণির ফল প্রকাশের আগেই যদি ষষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তির বিষয়টি চূড়ান্ত করে ফেলা হয়, তাহলে গরিব ও সাধারণ পরিবারের মেধাবী সন্তানরা ন্যায্য সুযোগ পাবে কীভাবে? নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক সরকারি বিদ্যালয়ের শিক্ষক বলেন, এই নিয়ম আমাদেরও অস্বস্তিতে ফেলে। ফল ছাড়া ভর্তি মানেই মেধাভিত্তিক মূল্যায়ন বাদ দেওয়া। কিন্তু আমরা কথা বলার সুযোগ পাই না। আরেক শিক্ষক বলেন, ফ্যাসিবাদী আমলে জারি হওয়া অনেক প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত এখনো রিভিউ হয়নি। ভর্তি প্রক্রিয়াটিও তার একটি উদাহরণ। হবিগঞ্জ সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মো. খলিলুর রহমান বলেন, রেজাল্টের আগে ভর্তি করার নিয়ম নেই- এটা আমরা স্বীকার করি। তবে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পরিপত্র অনুযায়ী লটারির মাধ্যমে ভর্তি প্রক্রিয়া পরিচালনা করা হচ্ছে। বিদ্যালয়ের প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ছাড়া কাউকে ভর্তি করা হয় না। যেসব শিক্ষার্থী রেজাল্টের আগে প্রাথমিকভাবে মনোনীত হয়েছে, পরবর্তীতে যদি তাদের ফল খারাপ হয়, তাহলে ওয়েটিং লিস্ট থেকে যোগ্য শিক্ষার্থী ভর্তি করা হবে। সচেতন নাগরিক সাইফুল ইসলাম বলেন, ৬ষ্ঠ শ্রেণীতে ছাত্র-ছাত্রীদের ভর্তির ক্ষেত্রে লটারির পদ্ধতি প্রয়োগ করা হচ্ছে। এতে মেধাবী শিক্ষার্থীরা স্থান থেকে বঞ্চিত হয়, আর কম সক্ষম শিক্ষার্থীরা অপ্রত্যাশিতভাবে সুযোগ পায়। এই পদ্ধতি শিক্ষার মান এবং ন্যায্যতাকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে। আমরা চাই, ভর্তিতে যোগ্যতা-ভিত্তিক ব্যবস্থা প্রণয়ন করা হোক। 
চুনারুঘাট উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার কাওছার শোকরানা বলেন, বিষয়টি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনার আওতাভুক্ত। তিনি জানান, উক্ত নির্দেশনা অনুযায়ী সংশ্লিষ্টরা বাধ্য হয়েই তা বাস্তবায়ন করছেন। অন্যদিকে চুনারুঘাট উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার নাজনীন সুলতানা বলেন, পঞ্চম শ্রেণির ফলাফল প্রস্তুত করতে নির্দিষ্ট সময় প্রয়োজন হয়। তিনি জানান, আগামী ৩০ ডিসেম্বর মা সমাবেশের মাধ্যমে ফল প্রকাশ করা হবে। পাশাপাশি তিনি স্পষ্ট করে বলেন, ফল প্রকাশের আগে ভর্তি কার্যক্রম পরিচালনার কোনো সিদ্ধান্ত উপজেলা শিক্ষা অফিসের পক্ষ থেকে নেওয়া হয়নি। 
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মো. শাহ আলম জানান, রেজাল্ট দ্রুত প্রকাশের জন্য সংশ্লিষ্ট উপজেলাগুলোকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। জেলা মাধ্যমিক  শিক্ষা অফিসার ফরিদা নাজমিন বলেন, ২০২১ সাল থেকে মন্ত্রণালয়ের নির্ধারিত নীতিমালা অনুযায়ীই ভর্তি কার্যক্রম পরিচালিত হয়ে আসছে। তাঁর ভাষ্য অনুযায়ী, ফল প্রকাশের আগেই যারা ভর্তির আবেদনে প্রাথমিকভাবে নির্বাচিত হয়েছেন, এ পর্যন্ত তাদের মধ্যে কেউই ফেল করেনি। তবে ফল প্রকাশের আগে ভর্তি প্রক্রিয়াটি আদৌ নিয়মের মধ্যে পড়ে কি না- এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি সরাসরি কোনো স্পষ্ট মন্তব্য না করে বিষয়টি এড়িয়ে যান। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ভর্তি সংক্রান্ত বিস্তারিত তথ্য জানতে সংশ্লিষ্ট স্কুল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলাই উত্তম। 
হবিগঞ্জের জেলা প্রশাসক আবু হাসনাত মোহাম্মদ আরেফীন বলেন, ফল প্রকাশের আগে ভর্তি করার কোনো নিয়ম নেই এবং বিষয়টি জেলা প্রশাসনের নজরে রয়েছে। তিনি জানান, এ সংক্রান্ত প্রাপ্ত অভিযোগগুলো সংশ্লিষ্ট দপ্তরের সঙ্গে পর্যালোচনা করে প্রয়োজনীয় আলোচনা শেষে তা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে উপস্থাপন করা হবে।

প্রথম পাতা