জাকারিয়া চৌধুরী
হবিগঞ্জে হঠাৎ করেই বন্ধ করে দেয়া হচ্ছে রেলওয়ের ক্রসিংগুলো। যে কারণে বিকল্প কোন পথ না থাকায় চরম দূর্ভোগে পড়েছেন হাজার হাজার মানুষ। এছাড়াও রেলওয়ের এমন কর্মকান্ডে ক্ষোভে ফুসে উঠছেন তারা। যদিও রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের দাবী- সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী এ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। তবে গুরুত্বপূর্ণ ক্রসিংগুলোতে স্থানীয়রা চাইলে নিজস্ব অর্থায়নে গেটম্যানসহ গেট চালুর অনুমোদন নিতে পারবেন। তারা বলছেন- মূলত দুর্ঘটনা কমাতেই অরক্ষিত রেলক্রসিংগুলো বন্ধ করে দেয়া হচ্ছে। তবে বিকল্প রাস্তার ব্যবস্থা ছাড়া হঠাৎ পথ বন্ধ করে দেওয়ায় চরম বিপাকে পড়তে হচ্ছে গ্রামবাসিকে। তাদের অভিযোগ, এ সিদ্ধান্তে সাধারণ মানুষসহ অ্যাম্বুল্যান্স ও ফায়ার সার্ভিসের মতো জরুরি সেবা গ্রহণকারীরা বিপাকে পড়বেন। এছাড়াও কৃষি কাজ ও মালামাল আনা নেয়ার ক্ষেত্রে বিড়ম্বনায় পড়তে হবে সাধারণ মানুষদের।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়- জেলার শায়েস্তাগঞ্জ পৌরসভার পশ্চিম বড়চর এলাকার কয়েকটি গ্রামের অন্তত তিন হাজার মানুষের চলাচলের একমাত্র রেলক্রসিং পথটি বড় বড় লোহার পাত দিয়ে পুর্ব ঘোষণা ছাড়াই হঠাৎ বন্ধ করে দিচ্ছে রোলওয়ের কর্মচারীরা। এসময় শত শত গ্রামবাসি জড়ো হয়ে পথ বন্ধ না করতে অনুরোধ জানান। কিন্তু রেলওয়ের কর্মচারীরা কারো কথায় কর্ণপাত না করে তারা তাদের কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। আর এ নিয়ে চরম ক্ষোভ ও হাতাশা প্রকাশ করেন গ্রামবাসি। পশ্চিম বড়চর এলাকার ক্ষুব্ধ লোকজন অভিযোগ করে বলেন- গত ৫০ বছরের পুরনো এই লেভেল ক্রসিং হঠাৎ বন্ধ করে দেয়ায় বিপাকে পড়ছেন শিক্ষার্থী, কর্মজীবী মানুষসহ জরুরি সেবা গ্রহণকারীরা। এলাকায় প্রবেশ করতে পারবে না অ্যাম্বুল্যান্স, ফায়ার সার্ভিস কিংবা পণ্যবাহী পরিবহনও। যে কারণে তাদের দূর্ভোগের মাত্রা কোথায় গিয়ে শেষ হবে তা অজানা।
হবিগঞ্জ রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের দেয়া তথ্যানুযায়ী জেলার অরক্ষিত ও অনুমোদনহীন ৪৬টি লেভেল ক্রসিং শনাক্ত করা হয়েছে। এরমধ্যে অধিক ঝুঁকিপূর্ণ অন্তত ২০টি ক্রসিং প্রথম ধাপে স্থায়ীভাবে বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে। বাকি ২৬টিও পর্যায়ক্রমে বন্ধ করা হবে। তারা বলেন- উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে ক্রসিংগুলো বন্ধ করে দেয়া হচ্ছে। ইতোমধ্যে বাহুবল থেকে শায়েস্তাগঞ্জ পর্যন্ত বেশ কিছু ক্রসিংয়ে রেলের পাত ও খুঁটি বসিয়ে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। পর্যায়ক্রমে সবকটি ক্রসিং বন্ধ করে দেয়া হবে।
ভুক্তভোগীদের অভিযোগ- কোন কোন রাস্তা রেল লাইন স্থাপনের আগ থেকেই গ্রামবাসি ব্যবহার করছেন। আবার কোন কোন রাস্তা গ্রামের প্রবেশের একমাত্র পথ। যে কারণে এই ক্রসিংগুলো গ্রামবাসির কাছে অধিক গুরুত্বপুর্ণ। কারণ এই পথ বা রাস্তা ব্যবহার করেই রোগীদের আনা নেয়া, ফায়ার সার্ভিসসহ যানবাহন চলাচল, কৃষি কাজের জন্য ব্যবহার, মালামাল আনা নেয়া ও চলাচলের ক্ষেত্রে ব্যবহার হয়। কিন্তু হঠাৎ করেই এই ক্রসিং পথগুলো বন্ধ হতে যাওয়ায় চরম বিপাকে তারা। মইনুল মিয়া নামে এক শ্রমিক জানান- শায়েস্তাগঞ্জ কলেজের ক্রসিং দিয়ে তারা দীর্ঘদিন যাবত আসা যাওয়া করেন। কিন্তু এখন ক্রসিংটি বন্ধ হলে প্রায় দুই কিলোমিটার ঘুরে আসতে হবে তাদের। মুহিন শিপন নামে এক কলেজ ছাত্র বলেন- শায়েস্তাগঞ্জ ও বাহুবলে অসংখ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে রেললাইনের পাশে। এখন পর্যায়ক্রমে সকল ক্রসিং বন্ধ করে দেয়া হলে ভোগান্তিতে পড়তে হবে শিক্ষার্থীদের।
বাংলাদেশ রেলওয়ের ওয়ার্কার সুপারভাইজার নজির আহমেদ বলেন- দুর্ঘটনা এড়াতে সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী অবৈধ ক্রসিংগুলো বন্ধ করা হচ্ছে। তবে গুরুত্বপূর্ণ ক্রসিংগুলোতে স্থানীয়রা নিজস্ব অর্থায়নে গেটম্যানসহ গেট পরিচালনার ইচ্ছা থাকলে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমোদন নেওয়ার সুযোগ আছে। তিনি বলেন- এইসব ক্রসিংয়ে কোন দুর্ঘটনা ঘটলে কেউ দায় নিতে চায় না উল্টো রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের উপর পরে। তাই এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
যদিও বিকল্প যাতায়াত ব্যবস্থা না করে ক্রসিং বন্ধ করায় বিভিন্ন এলাকায় বাড়ছে ক্ষোভ। দ্রুত সমস্যা সমাধান না হলে, কঠোর আন্দোলনের হুশিয়ারী স্থানীয়দের।