মাধবপুরে ২০ টাকার জন্য শিশুকে গলাটিপে হত্যা ॥ হত্যার দায় স্বীকার করে আদালতে স্বীকারোক্তি দিয়েছে ভাবী শাপলা
তারিখ: ৩০-মার্চ-২০১৫
নিরঞ্জন গোস্বামী শুভ ॥

মাধবপুরে নিখোঁজের ২ দিন পর শিশু ইসমাইলের লাশ উদ্ধার হওয়ার রহস্য উৎঘাটন করেছে পুলিশ। ভাবী শাপলা বেগম ইসমাইলকে গলা টিপে হত্যা করে নিজের ঘরে ধানের গোলার নিচে রাখার কথা স্বীকার করেছে। দেবর ইসমাইল দোকান থেকে বিস্কুট কিনবে বলে ২০ টাকা চাইলে না দিতে পারায় তাকে বকাঝকা করায় রাগের মাথায় তিনি তাকে হত্যা করেন। গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে হবিগঞ্জের জ্যোষ্ঠ বিচারিক হাকিম নিশাত সুলতানার চেম্বারে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দিতে তিনি এই কথা বলেন। এর আগে পুলিশের কাছে জিজ্ঞাসাবাদেও সে একই তথ্য জানায়।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্র জানায়, মাধবপুর পৌর শহরের পশ্চিম পাড়ার রজব আলীর ছেলে ইসমাইল (৫) শনিবার নিখোঁজ হয়। অনেক খোঁজাখুঁজি করে কোথাও তাকে না পেয়ে তার পিতা রজব আলী মাধবপুর থানায় সাধারণ ডায়েরী করেন। শিশুটির নিখোঁজের খবর বিভিন্ন মিডিয়াতে প্রকাশ পায়। এলাকায় ছেলেধরা আতঙ্ক দেখা দেয়। পুলিশও তার সন্ধানে অভিযান চালায়। সোমবার সকালে শিশু ইসমাইলের বড় ভাই জুয়েল মিয়া ঘরের ভিতর লাশের গন্ধ পেয়ে ঘর তল্লাশী করে ভাই ইসমাইলের লাশ দেখতে পান। সাথে সাথে ঘটনাটি জানানো হয় থানায়। খবর পেয়ে থানার ওসি মোল্লা মনির হোসেন ঘটনাস্থলে পৌঁছে ধানের গোলার মাচার নিচ থেকে ইসমাইলের লাশ উদ্ধার করেন। পরে লাশের সুরতহাল তৈরি করে ময়না তদন্তের জন্য লাশটি হবিগঞ্জ মর্গে প্রেরণ করে পুলিশ।

লাশ উদ্ধারের পরপরই পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নিহত শিশু ইসমাইলের বাবা রজব আলী, মা রহিমা বেগম, ভাই জুয়েল মিয়া ও ভাবী শাপলা বেগমকে আটক করে থানায় নিয়ে যায়। থানায় তাদেরকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। খবর পেয়ে আলাদাভাবে মাধবপুর যান হবিগঞ্জের পুলিশ সুপার জয়দেব কুমার ভদ্র, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শহিদুল ইসলাম, সহকারী পুলিশ সুপার মাসুদুর রহমান মাসুদ। ইসমাঈলের লাশ উদ্ধারের খবর পেয়ে শত শত জনতা ঘটনাস্থলে ভিড় জমায়।

সোমবার রাতে থানায় পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদের এক পর্যায়ে শিশু ইসমাইলকে হত্যার কথা স্বীকার করে ভাবী শাপলা বেগম। শাপলা পুলিশকে জানায়, ২৬ মার্চ সকালে ইসমাইল তার কাছে মজা খাওয়ার জন্য ২০ টাকা চায়। শাপলা ২০ টাকা না দিলে ইসমাইল তাকে গালি দেয়। এতে শাপলা রাগান্বিত হয়ে ইসমাইলকে খাটের উপর ফেলে গলা টিপে ধরে। এতে ইসমাইল মারা যায়। এ সময় ইসমাইল পায়খানা করে দিলে শাপলা তার প্যান্ট এবং শার্ট খুলে ধানের গোলার নিচে লুকিয়ে রাখে। এ পরিস্থিতিতে শাপলা পরিকল্পনা করেছিল রাতের কোন এক সময় তার মৃতদেহ পানিতে ফেলে দেবে। কিন্তু রাতে সে সুযোগ পায়নি শাপলা বেগম। এদিকে নিহত ইসমাইলের বোন রুমা (৭) পুলিশকে জানায়, ওইদিন সকালে ভাবি তাকে শাক তোলার জন্য জমিতে পাঠায়। শাক তুলে বাড়িতে এসে ভাবিকে দেখতে না পেয়ে সে খোঁজাখুজি করতে থাকে। অনেকক্ষণ পর ঘরে এসে ভাবীকে দেখতে পেয়ে জিজ্ঞেস করলে ভাবী শাপলা তাকে জানায় সে ঘরেই ছিল। ইসমাঈল কোথায় জিজ্ঞেস করলে ঘরে নেই খুঁজে দেখার জন্য পাঠায়। রুমা খোঁজাখুজি করে ঘরে এসে দেখে দরজায় বসে তার ভাবি কান্না করছে। বলছে ইসমাইলকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। এ সময় সে পাশের পুকুরে নেমে ইসমাইলকে খুঁজতে থাকে। জীবিকার তাগিদে ইসমাইলের বাবা রিক্সাচালক রজব আলী ও মা রহিমা বেগম বাড়ির বাইরে ছিল। শাপলার স্বীকারোক্তির পর ইসমাইলের মা-বাবা ও ভাইকে ছেড়ে দেয় পুলিশ। খুনের রহস্য উদঘাটনের পর গভীর রাতে ইসমাইলের বাবা রজব আলী বাদী হয়ে পুত্রবধূ শাপলা বেগমকে একমাত্র আসামী করে খুনের মামলা দায়ের করেন। গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে শাপলা বেগমকে আদালতে আনলে সে ঘটনা স্বীকার করে। তবে সে জানায় হত্যা করা তার উদ্দেশ্য ছিল না। যখন ইসমাইল মারা যায় তখন বাচার জন্য সে লাশটি গোপন করে রাখে। পরে সেটি ডুবাতে পালানোর পরিকল্পনা ছিল। সুযোগ না হওয়ায় তা আর সম্ভব হয়ে উঠেনি। মঙ্গলবার দুপুরে পুলিশ সুপার জয়দেব কুমার ভদ্র তার সভাকক্ষে এক প্রেস ব্রিফিংএ তথ্য জানানো হয়। ইসমাইলের পরিবারের লোকজন দরিদ্র প্রতিদিন ইসমাইলের বাবা-মা ও ভাই কাজে চলে গেলে শাপলা বেগম তার দেবর ইসমাইল ও ননদ রুমাকে নিয়ে বাড়েিত থাকেন। ঘরের পাশেই বাজার হওয়ায় প্রতিদিনই ইসমাইল তার ভাবীর কাছে টাকা খুজে। দারিদ্রের জন্য সব সময় টাকা দেয়া সম্ভব না হওয়ায় ইসমাইল তাকে বকা ঝকা করে। ঘটনার দিন বেশী বকাঝকা করায় বিরক্ত হয়ে শাপলা বেগম ইসমাইলকে গলায় টিপ দেন। কিন্তু চাপ বেশী ও দীর্ঘ সময় হওয়ায় সে মারা যায়। পুলিশ দ্রুত ঘটনার রহস্য উৎঘাটন করায় সাধারন মানুষ হয়রানী থেকে রক্ষা পেয়েছে। তিনি আরও বলেন, বাহুবলের সুন্দ্রাটিকিতে ৪ শিশুকে হত্যার পর বারবার এধরনের ঘটনা প্রমাণ করে সমাজে ক্রমবর্ধমান অস্থিরতা বিজার করছে। এগুলো মেনে নেয়া যায় না। সমাজে মূল্যবোধের যে বিপর্যয় ঘটেছে তা রোধ করতে হবে।

প্রথম পাতা
শেষ পাতা